কোন কাজ সম্পাদানের উদ্দেশ্যে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের নির্দেশের সমষ্টিকে সফটওয়্যার ( Software ) বলে। যেমন- মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ( Microsoft word ), ইলাস্ট্রটর ( Illustrator ), উইন্ডোজ ৭ বা ১০ ( Windows 7 or 10 ) ইত্যাদি। সফটওয়্যারের অন্য নাম প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন। সফটওয়্যারকে কম্পিউটারের প্রাণশক্তি বা অদৃশ্য শক্তি বলা হয়। কেননা সফটওয়্যার ছাড়া কম্পিউটার হার্ডওয়্যার প্রাণহীন দেহের মতো অচল। Software দেখা যায় না এবং ধরা বা স্পর্শ করা যায় না। আমরা শুধু ইউজার ইন্টারফেস ( UI ) দেখতে পাই।
সফটওয়্যারের প্রকারভেদ
সফটওয়্যার প্রধানত দুই প্রকার। যথা: ১. সিস্টেম সফটওয়্যার ( System software ) ২. ব্যবহারিক সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ( Application software )
১. সিস্টেম সফটওয়্যার কি ? কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও বিভিন্ন সফটওয়্যারকে কার্যকর করার জন্য ব্যবহৃত সাহায্যকারী প্রোগ্রামসমূহকে সিস্টেম সফটওয়্যার বলে। সিস্টেম সফটওয়্যার তিন প্রকার: যথা- i) অপারেটিং সফটওয়্যার ii) ইউটিলিটি সফটওয়্যার ও iii) ডিভাইস সফটওয়্যার
i) অপারেটিং সফটওয়্যারঃ কম্পিউটার পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রন করার জন্য যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় তাকে অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার ( Operating System Software ) বলে। যেমন: উইন্ডোজ ( Windows ), ম্যাক ( Mac ), লিনাক্স ( Linux ) ইত্যাদি। অপারেটিং সফটওয়্যার ( O S ) ছাড়া কম্পিউটার পরিচালনা করা যায় না। আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সফটওয়্যার হলো Windows 7, Windows 10
ii) ইউটিলিটি সফটওয়্যারঃ যেসব সফটওয়্যার কম্পিউটারের রক্ষণাবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয় তাকে Utility Software বলে। যেমন: এন্টিভাইরাস, ডিস্ক ক্লিনার, ব্যাকআপ ইউটিলিটি ইত্যাদি। কম্পিউটারের পারফরমেন্স বৃদ্ধি করার জন্য ইউটিলিটি সফটওয়্যার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
iii) ডিভাইস সফটওয়্যারঃ ডিভাইস এর সাথে যেসব সফটওয়্যার দেওয়া হয় তাকে Device Software বলে। এগুলোকে ড্রাইভারও বলা হয়। ডিভাইস সফটওয়্যার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মাঝে ট্রান্সলেটর হিসাবে কাজ করে। যেমন- আপনি যদি নতুন একটি স্ক্যানার/প্রিন্টার/মডেম কিনেন তাহলে প্রথমে এটি কম্পিউটারে যুক্ত করার সময় একটি Driver ইন্সটল করতে হয়। একেই বলে ডিভাইস সফটওয়্যার। কখনো এসব ডিভাইস সফটওয়্যার ডিভাইসের সাথে দেওয়া থেকে কখনো আলাদা সিডি/ডিভিডি এর মধ্যে দেওয়া থাকে। বিশেষ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে নিতে হয়।
২. ব্যবহারিক সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার কি ? কোন বিশেষ কাজ সম্পাদানের উদ্দেশ্যে যে সফটওয়্যার তৈরি করা হয় তাকে ব্যবহারিক সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলে। এই সফটওয়্যার নির্দিষ্ট কোনো কাজ সম্পাদান করতে ব্যবহারকারীকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে। যেমন: Accounting Software ( Odoo Accounting / Wave Accounting ), Graphics Software ( Illustrator / Photoshop ), Internet browser ( Google Chrome / Mozilla Firefox), Office Program ( MS- Word / Excel / Power point ) etc. অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারকে অনেকে অ্যাপস (apps) বলে। Application Software দুই প্রকার। যথাঃ i) কাস্টমাইজড সফটওয়্যার ii) প্যাকেজ সফটওয়্যার
i) কাস্টমাইজড সফটওয়্যারঃ কাস্টমাইজড সফটওয়্যার একটি নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম যা কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিতে নির্দিষ্ট কাজ বা সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করা ব্যয় বহুল তবে সুবিধা হলো প্রয়োজনে Customized Software পরিবর্তন করা যায়। কাস্টমাইজড সফটওয়্যারের উদাহরণ হলো-
ক) একটি কোম্পানি তাদের ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা সিস্টেম করার জন্য নিজেস্ব অর্থয়নে ডেভলাপার দিয়ে এমন একটি সফটওয়্যার তৈরি করলো যা দিয়ে কর্মচারীদের উপস্থিতি-অনুপস্থিতি, আসা-যাওয়ার সময়, বেতনের হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি সহজে জানা যায়।
খ) সফটওয়্যার কোম্পানির রেডিমেট তৈরিকৃত হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার আছে। এখন একজন হাসপাতালের মালিক চিন্তা করে দেখলেন যে এই সফটওয়্যার দিয়ে সব সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তিনি তার হাসপাতালের জন্য আলাদা একটি কাস্টম সফটওয়্যার তৈরি করে নিলেন। যা দিয়ে রোগী, নার্স, ডাক্তারদের খুব সহজে পরিচালনা করা যায়।
গ) একটি ব্যাংক তার গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্য সর্বোচ্চ সিকিউরিটি মেনে নিজেদের জন্য একটি সফটওয়্যার বানালেন। মাঝে মাঝে বিভিন্ন সমস্যা সামাধানের জন্য সফটওয়্যারটি আপডেট করে হয়।
ii) প্যাকেজ সফটওয়্যারঃ ব্যবহারিক কাজ করার জন্য যেসব সফটওয়্যার বিনামূল্যে বা অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায় সেগুলোকে প্যাকেজ সফটওয়্যার বলে। একই ক্যাটাগরির কাজ করার জন্য, একই বৈশিষ্ট্য নিয়ে বান্ডেল আকারে প্যাকেজ সফটওয়্যার পাওয়া যায়। সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো Package Software জনসাধারণের জন্য পাবলিকলি উপস্থাপন করে। যেমন: মাইক্রোসফট কোম্পানির অফিস প্রোগ্রাম ( ওয়ার্ড / এক্সেল / পাওয়ার পয়েন্ট ), এডোভি এর ( ফটোশপ / ইলাস্ট্রটর ) ইত্যাদি। Package Software তুলানামূলক স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায়। তবে ইহা ব্যবহারকারীর ইচ্ছা বা সুবিধা মতে পরিবর্তন করা যায় না।
তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় প্রতিষ্ঠান ( IMB, Microsoft, Apple, Google, Facebook) সফলতার সাথে বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরি করে বাজারজাত করছে। মানুষের সুবিধার জন্য বর্তমানে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ( artificial intelligence ) যু্ক্ত সফটওয়্যার বাজারে আসছে। এসব কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনেক কঠিন কাজ খুব সহজে করা যাচ্ছে।