প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত কিংবা নিহত লোকের সংখ্যা। কোনো ভাবেই যেন এই দূর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আজ আমি আলোচনা করবো সড়ক দূর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো। তবে আমার আলোচনার মূল লক্ষ্য এই চিহ্নিত কারণগুলো থেকে সচেতন হয়ে দূর্ঘটনা প্রতিরোধ করা। সড়ক দূর্ঘটনার প্রধান কারণ সমূহ হচ্ছেঃ-
১. অত্যধিক আত্মবিশ্বাসঃ আত্মবিশ্বাস থাকা ভালো তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কখনও ভালো নয়। অনেক সময় চালকরা ভাবেন এই সরু জায়গা দিয়ে ওভারটেক করে যাওয়া যাবে। আসলে তিনি নিশ্চিত যেতে পারবেন কিনা তা চিন্তা না করে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে যাওয়ার চেষ্টা করে দূর্ঘটনার স্বীকার হন। আর এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কিন্তু পথচারীরও রাস্তাপার হওয়ার সময় দেখা যায়।
২. মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোঃ অনেকের কাছে হয়ত এটা গৌরবের বিষয় যে ‘আমি ঘণ্টায় এত কি.মি স্প্রীডে গাড়ি চালায়’। আর এই গৌরবটায় হতে পারে দূর্ঘটনার জন্য যথেষ্ট। গতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলেই বিপদ। আমি মানলাম যে, আপনি বেশি গতিতে গাড়ি চালালে দ্রুত বা নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌছাবেন। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে ‘সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি’। আপনি মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে যদি দূর্ঘটনার স্বীকার হন তাহলে কি নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌছাবেন? তবে এই দায় শুধু চালকের নয় যাত্রীদেরও আছে। “ও ভাই, জোরে চালাও বাচ্চার স্কুলের দেরী হয়ে যাচ্ছে”। “এই ড্রাইভার নতুন নাকি? অফিসের লেট হচ্ছে তো জোরে টানো”। এগুলো আমাদেরকে অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
৩. অননুমোদিত ওভারটেকিংঃ কিছু জায়গা আছে যেগুলোতে ওভারটেকিং করতে গিয়ে দূর্ঘটনা ঘটে। অথচ এই জায়গাগুলোতে ওভারটেক করা নিষিদ্ধ। যেমনঃ সরু রাস্তায়, পাহাড়ের ঢালে, ব্রিজ/কালভার্ট ও তার আগে পরে নির্দিষ্ট দূরত্বে, জাংশনে, অন্ধ বাঁকে, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায় এবং ওভারটেকিং নিষেধ সম্বলিত সাইন থাকে এমন স্থানে ওভারটেক করা নিষিদ্ধ।
৪. অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহনঃ ‘ভাই, বেশি নিলেইতো দুইটা পয়সা বেশি পাবো’। কিন্তু এই দুইটা পয়সার জন্য দূর্ঘটনা ঘটলে যে কত শতকোটি পয়সা ও অমূল্য জীবন চলে যায় তার দায়ভার কে নিবে? আপনার মাথায় যদি ৫০ কেজির ১টি চালের বস্তার জায়গায় যদি ২টি চালের বস্তা দেওয়া হয় কেমন লাগবে? গাড়ি এই অতিরিক্ত বোঝার জন্য কখনও চাকা বাস্ট হয়ে বা ব্রেক মিস করে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দূর্ঘটনার স্বীকার হয়।
৫. নিরাপদ দূরত্বে না থাকাঃ সামনের গাড়ি থেকে যতটুকু দূরত্বে থাকলে পেছনের গাড়িকে সহজেই থামানো যাবে ততটুকু দূরত্ব না থাকার কারণে অনেক দূর্ঘটনা ঘটে। চালকের মাথায় রাখতে হবে যেকোনো সময় সামনের গাড়ি থামতে পারে যদি নিরাপদ দূরত্ব না থাকে তাহলে ব্রেক করার পরও সামনের গাড়ির সাথে সংঘর্ষ হবে।
৬. খারাপ রাস্তাঃ উঁচু-নিচ, ভাঙ্গা, গর্ত, পিচ্ছিল, বৃষ্টির পানি থাকা এবং পাহাড়ী রাস্তায় অসর্তকতার কারণে দূর্ঘটনা ঘটে। কারণ এ সময় গাড়ির স্টিয়ারিং বেশি নাড়া-চাড়া করে কিংবা ব্রেক কম কাজ করে নিয়ন্ত্রন হারায়।
৭. অমনযোগীঃ সড়ক দূর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ অমনযোগী হয়ে গাড়ি চালানো। নানা কারণে চালকের মনযোগ নষ্ট হয়। যেমনঃ মোবাইলে কথা বলা, যাত্রীদের সাথে কথা বলা, কোন কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা বা হতাশাগ্রস্থ হওয়া কিংবা উদ্বিগ্ন হওয়া, ঘুম ভাব, মাতাল ইত্যাদি অমনযোগীর জন্যই চালক নিয়ন্ত্রন হারায়। তবে পথচারীরাও এই রকম অমনযোগী হয়ে দূর্ঘটনায় পড়ে।
৮. প্রতিযোগীতাঃ যাত্রীবাহী গাড়িগুলো অধিক যাত্রী পাওয়ার আশায় প্রতিযোগীতা করে। এই আগে যাওয়ার মানসিকতা থেকে ঘটে যায় সংঘর্ষ।
৯. গাড়ির সমস্যাঃ অনেক সময় গাড়ির সমস্যার কারণে দূর্ঘটনা ঘটে। দু-একটা যান্ত্রিক কারণ ছাড়া বাকিগুলোর জন্য চালকের কিংবা মালিকের অবহেলা-ই দায়।
১০. ট্রাফিক আইন না মানাঃ ট্রাফিক আইন না মানার কারণে সড়ক দূর্ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোড সাইন, ট্রাফিক সিগন্যাল, গতিসীমা ইত্যাদি আইন মানা আবশ্যই একজন চালকের কর্তব্য। পথচারীদেরও কিছু কারণে ট্রাফিক আইন জানা উচিত।
সড়ক দূর্ঘটনায় আর যেন কোন স্বজনের আহাজারিতে ভারি না হয় বাংলার আকাশ বাতাস। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এটাই সকলের প্রাণের দাবি।