শিশুর চোখের যত্ন

বাচ্চাদের চোখের যত্ন

চোখ সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এক অমূল্য সম্পদ। যার মাধ্যমে আমরা সুন্দর পৃথিবীর রূপ দেখতে পায়। আজকাল বাচ্চাদের মধ্যে চোখের সমস্যা বেশিই দেখা যায়। কিছু সমস্যা দেখা দেয় স্বাভাবিকভাবে আর কিছু দুর্ঘটনা বা চোট বা আঘাত লেগে। আবার চোখের বিভিন্ন রোগ থেকে চোখের সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের একটু সচেতনতাই পারে শিশুর চোখের সুরক্ষা দিতে। শিশুর চোখের যত্নে যেসব দিকে খেয়াল রাখতে হবে-

১. গেমস খেলা বা কার্টুন দেখা বাচ্চাদের খুবই প্রিয়। কিন্তু আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে এগুলো যেন দীর্ঘ সময় নিয়ে না করে। কেননা দীর্ঘ সময় স্ক্রীন এর দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে যেতে পারে।

২. বাচ্চার চোখে যেন আঘাত না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চোখে আঘাত লাগতে পারে এমন জিনিস দিয়ে খেলতে দিবেন না। যদিও কোন আঘাত লাগে তবে কালক্ষেপণ না করে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন।

৩. তাদেরকে একটু পর পর চোখের পাতা ফেলার জন্য উপদেশ দিন এবং কোন কিছুতে দীর্ঘ সময় ধরে তাকাতে হলে বিরতি নিয়ে তাকাতে বলুন।

৪. তার চোখের পাওয়ার ঠিক আছে কিনা তা জানতে নির্দিষ্ট সময় পর পর চোখের ডাক্তার দেখান।

আপনার বাচ্চার কি চশমা লাগবে?

চশমা যে শুধু বড়দের লাগে তা না বাচ্চাদেরও চশমার প্রয়োজন হতে পারে। আপনার বাচ্চার চশমা লাগবে কি না তা দেখবে ডাক্তার। আপনাকে দেখতে হবে চশমা লাগতে পারে এমন কিছু লক্ষণ-

১. আপনার বাচ্চা ক্লাসের পিছনের বেঞ্চে বসতে চাই না। হয়ত সে পিছন থেকে বোর্ডের লেখা পড়তে পারে না। অথবা সামনের বেঞ্চে বসতে চাই না। কারণ সে সামনে থেকে বোর্ডের লেখা পড়তে পারে না কিন্তু পিছন থেকে পড়তে পারে।

২. টিভি দেখার সময় খুব কাছে বা বেশি দূরে থেকে দেখতে চাই।

৩. বই পড়ার সময় চোখের খুব কাছে বা বেশি দূরে নিয়ে পড়ছে।

৪. একটু পড়াশুনা করলে বলবে মাথা ধরছে। চোখে জল পড়ছে বা চোখ ব্যাথা করছে।

৫. এছাড়া সে দূরবর্তী কোন বস্তু স্পষ্ট দেখতে পারে না। অথবা কোন কিছু দেখতে চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট বা বড় করে দেখছে।

উপরের কোন লক্ষণ যদি আপনার বাচ্চার মধ্যে দেখতে পান তাহলে আর দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

শিশুর চোখের বিভিন্ন রোগ

ক. কনজাংটিভাইটিস- এই রোগে আক্রান্ত সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এতে চোখ লাল হয় এবং চোখ চুলকাতে পারে। এটি ছোঁয়াচে রোগ। মূলত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী।

খ. অঞ্জলি- এই রোগে চোখের পাতায় গুটির মতো দানা উঠে। বয়স্ক বা শিশু যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে এটা ১৫- ২০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।

গ. বাঁকাটেরা চোখ- যদি শিশু স্বাভাবিক কোন কিছু দেখেতে চোখ বাঁকা করে দেখে অর্থাৎ সামনের দিকে তাকানোর সময় যদি চোখের মনি সোজাসুজি না থাকে তাহলে তাকে বাঁকাটেরা চোখ বলে। বেশির ভাগ টেরা চোখ জন্মগতভাবে হয়। এর দ্রুত চিকিৎসা না করালে চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে গিয়ে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ঘ. ছানি- ছানি যে শুধু বয়স্কদের হয় তা না শিশুদেরও হতে পারে। জন্মগত বা আঘাত জনিত কারণে ছানি হতে পারে। সাধারণত চোখের মনি সাদা হলে তাকে ছানি বলে। এছাড়াও কোন কিছু না দেখা , টেরা চোখ , চোখের অস্বাভাবিক নাড়াচাড়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। সময় মত এর চিকিৎসা না করালে চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ঙ. চোখের আঘাত- বাচ্চারা খেলাধুলা, দুষ্টামি করতে গিয়ে প্রায় চোখে আঘাত প্রাপ্ত হয়। আঘাতের উপর ভিত্তি করে চোখের অনেক কঠিন রোগ কিংবা অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসব ক্ষেত্রে কখনই অবহেলা করা উচিত নয়।

চ. পুষ্টিজনিত রোগ- আপনার শিশু কি রাতে কম দেখে? তাহলে তার কি রাতকানা রোগ হয়েছে? আপনি যদি সময় মত বুঝতে পারেন তাহলে ভয় নেই। নিশ্চয় আপনার শিশুর ভিটামিন ‘এ’ অভাব হয়েছে।শিশুকে জন্মের পর থেকে দুই বছর পর্যন্ত শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খেতে দিন, ছয় মাস বয়সের পর শিশুকে চাল, ডাল, শাক-সবজি, মাংস, তেল দিয়ে রেঁধে খেতে দিন, শিশুকে নিয়মিত টিকা দিন, ছয় বছর পর্যন্ত ছয় মাস অন্তর ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ান।

চোখের মত সংবেদনশীল অঙ্গের কোন সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নেওয়া খুব জরুরি। সুস্থ থাকুক শিশুর চোখ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *