কোন কারণে জমি হস্তান্তর হলে খতিয়ানে পুরোনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নাম প্রতিস্থাপন করানোকে নামজারি বা মিউটেশন বলে। বাংলাদেশে ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাসত্ত্ব আইন অনুযায়ী এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
নামজারি কত প্রকার ও কি কি
নামজারি তিন প্রকারঃ
- নামজারি
- জমা খারিজ
- জমা একত্রিকরণ
1.নামজারিঃ উত্তোরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি ওয়ারিশ সনদ অনুযায়ী ব্যক্তিদের নামে নামজারি করা হয়। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ আইন ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারা অনুয়াযী এটি সম্পাদিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কোন নতুন খতিয়ান হয় না। অর্থ্যাৎ খতিয়ান নাম্বার একই থাকে। আলাদা খতিয়ান করা হয় না। তবে যদি বন্টন দলিল থাকে তাহলে আলাদা খতিয়ান করা যাবে। অন্যথায় ওয়ারিশদের নামে এজমালি বা জয়েন্ট খতিয়ান করতে হবে। যেমনঃ জনাব আবদুর রাহমান ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার ৩ ছেলে, ১ মেয়ে ও স্ত্রী এবং নিজ নামে ২০ ডিসিমেল জমি আছে। এখন নামজারি করা হলে, আবদুর রাহমানের জমির খতিয়ানে তার নামের স্থলে ওয়ারিশদের নাম হবে তবে খতিয়ান নাম্বার একই থাকবে।
2. জমা খারিজঃ ক্রয়সূত্রে, দানসূত্রে, হেবাসূত্রে, ইজারা, ওসিয়ত ইত্যাদি ক্ষেত্রে জমির মালিক হলে জমা খারিজ করতে হবে। এককথায় দলিল মূলে মালিক হলে জমা খারিজ করতে হয়। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ আইন ১৯৫০ এর ১১৭ ধারা অনুয়াযী এটি সম্পাদিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে নতুন খতিয়ান সৃষ্টি হয়। নতুন তলব(হোল্ডিং) করা হয় এবং নামজারিতে পুরাতন মালিকের নামের পরিবর্তে নতুন মালিকের নাম প্রতিস্থাপন করা হয়। যেমনঃ জনাব রহিম উল্যাহ-র কাছ থেকে ১০ শতাংশ জমি জনাব মোঃ আবদুল মালেক খরিদ করেছে। এক্ষেত্রে জনাব মোঃ আবদুল মালেক-কে জমা খারিজ করতে হবে।
3. জমা একত্রিকরণঃ একই মৌজায় একাধিক জমি ক্রয়ে করে থাকলে পূর্বের নামজারিকৃত খতিয়ানের সাথে নতুন ক্রয়কৃত জমির নামজারি যুক্ত হচ্ছে জমা একত্রিকরণ। অর্থ্যাৎ নতুন খতিয়ান সৃষ্টি না করে পুরাতন খতিয়ানে নতুন জমি যুক্ত করে দেওয়া। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ আইন ১৯৫০ এর ১১৬ ধারা অনুয়াযী এটি সম্পাদিত হয়ে থাকে। যেমনঃ আবুল কাশেমের জামালপুর মৌজায় ৮ শতাংশ জমি আছে। তিনি তার বাড়ির পাশে একই মৌজায় আরোও ৫ শতাংশ জমি কিনলেন। এখন তার নতুন কেনা জমি নামজারি করার জন্য জমা একত্রিকরণের আবেদন করতে হবে। তাহলে নতুন খতিয়ান সৃষ্টি হবে না। তার মানে পূর্বের খতিয়ানের ৮ শতাংশ জমির সাথে নতুন ৫ শতাংশ জমি একত্রিত হয়ে ১৩ শতাংশ হবে। কিন্তু খতিয়ান নাম্বার একই থাকবে।
নামজারির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- মালিকানা দলিলের ফটোকপি
- সর্বশেষ খতিয়ান
- সর্বশেষ রেকর্ডীয় খতিয়ান
- খাজনার দাখিলা (রশিদ)
- ওয়ারিশ সনদ(উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হলে)
- আদালতের ডিক্রি(যদি থাকে)
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি, NID, নামজারির আবেদনপত্র
নামজারি করতে কত টাকা এবং কত দিন লাগে
নামজারির খরচঃ ২০ টাকার কোর্ট ফি, ৫০ টাকার নোটিশ জারি ফি, রেকর্ড সংশোধন ১০০০ টাকা, খতিয়ান ফি ১০০ টাকা। সর্বমোট ১১৭০ টাকা।
সময়ঃ
১। ব্যাক্তি আবেদনে বা LT নোটিশ প্রাপ্তির পর সর্বোচ্চ ২৮ দিন।
২। প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য মহানগরীর ক্ষেত্রে ৯ দিন অন্যান্য ক্ষেত্রে ১২ কার্যদিবস।
৩। বিনিয়োগবান্ধব রপ্তানিমূখী শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান(ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ,গাজিপুর ও চট্টগ্রাম এলাকার ক্ষেত্রে) ০৭ দিন।
সেবা প্রাপ্তির স্থানঃ
১. উপজেলা/রাজস্ব সার্কেল ভূমি অফিস
২. ইউনিয়ন ভূমি অফিস
নাম জারির আবেদন অনলাইনে করা কি বাধ্যতামূলক?
অনলাইনে অথবা অফিসে গিয়ে দুইভাবেই নামজারি করা যায়।