ওযু শব্দটি আরবি। ওযু অর্থ হাতমুখ ধোয়া। ওযুকে ইংরেজীতে Purify, Clean, Clear Wash, Ablution ইত্যাদি বলা যায়। সর্বদা পবিত্র অবস্থায় থাকার জন্য অথবা কোন ইবাদাতের উদ্দেশ্যে ইসলামে বর্ণিত ওযুর নিয়ম অনুযায়ী পানির সাহায্যে মুখমণ্ডল, হাত, পা ধৌত করা ও মাথা মাছেহ করাকে ওযু বলা হয়। সাধারণত আমরা নামায আদায়ের জন্য ওযু করে থাকি। কেননা ওযূ ব্যতীত নামায আদায় হবে না। আজ আমরা যা জানবো তাহলো-
- ওযু কত প্রকার
- ওযুর ফরজ কি কি
- ওযুর সুন্নাত কি কি
- ওযুর মুস্তাহাব কি কি
- ওযুর মাকরূহগুলো কি
- ওযুর দোয়া
- ওযু কিভাবে করতে হয়
- ক্ষত ও ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে ওযু করার সঠিক নিয়ম
- ওযু ভঙ্গের কারণ কি কি
- যেসব কারণে ওযু ভাঙ্গে না
ওযু কত প্রকার
ওযু তিন প্রকার। ১. ফরজ ওযু- নামায আদায় করার জন্য ওযু করা। ০২. ওয়াজিব ওযু- বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করার জন্য ওযু করা। ০৩. মুস্তাহাব ওযু- ঘুমানোর জন্য ওযু করা, মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর জন্য ওযু করা, পবিত্রতার জন্য ওযু করা ইত্যাদি।
ওযুর ফরজ কি কি
ওযুর ফরজ ৪ টি। যথা-
- সমস্ত মুখ ধোয়া।
- উভয় হাতের কনুইসহ ধোয়া।
- মাথা মাসেহ করা।
- উভয় পায়ের টাখনুসহ ধোয়া।
ওযুর সুন্নাত কি কি
- ওযুতে নিয়ত করা।
- বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করা।
- উভয় হাতের কব্জিসহ তিনবার ধোয়া।
- উভয় হাতের আঙ্গুলি খিলাল করা।
- তিনবার মেসওয়াক করা সুন্নাত।
- ৩ বার কুলি করা।
- তিনবার নাকে পানি দেওয়া।
- সমস্ত মুখ ৩ বার ধোয়া সুন্নাত।
- ডান হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া।
- বাম হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া।
- সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা।
- কান মাসেহ করা।
- ডান পায়ের টাখনুসহ তিনবার ধোয়া।
- বাম পায়ের টাখনুসহ তিনবার ধোয়া।
- উভয় পায়ের আঙ্গুলি খিলাল করা।
ওযুর মুস্তাহাব কি কি
- উঁচু স্থানে বসে ওযু করা।
- কিবলার দিকে মুখ করে ওযূ করা।
- দুনিয়াবি কথা না বলা।
- বিনা ওজরে কারো সাহায্য না নেওয়া।
- ডান হাত দিয়ে পানি নিয়ে কুলি করা।
- ডান হাত দিয়ে নাকে পানি দেওয়া ও বাম হাত দিয়ে নাক পরিষ্কার করা।
- নামাজের পূর্বেই ওযু করে প্রস্তুত থাকা।
- প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় বিসমিল্লাহ পাঠ করা।
- আংটি, নাক-ফুল, চুড়ি ঢিলা হয় তবে নাড়াচাড়া করে পানি পৌছানো। যদি ঢিলা না হয় তবে ভালভাবে নাড়াচাড়া করে অবশ্যই পানি পৌছাতে হবে।
- ওযু শেষে কিবলা মুখি হয়ে দাঁড়িয়ে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করা।
- ওযু শেষে কিছু অবশিষ্ট পানি পান করা।
ওযুর মাকরূহগুলো কি
- প্রয়োজনের তুলনায় কম বা বেশি পানি ব্যবহার করা।
- মুখের উপর জোরে পানি দেওয়া।
- ওযু করতে বসে দুনিয়াবি কথা বলা।
- প্রয়োজন ছাড়া কারো সাহায্য নেওয়া।
- নাপাক জায়গায় বসে ওযু করা।
ওযুর দোয়া
ওযুতে দোয়া পড়া উত্তম। এতে অনেক সাওয়াম রয়েছে। ozur dua ওযু করতে শুরুতে পড়তে হবে- ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম‘। এরপর ওযুর দোয়া- ‘বিসমিল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম। ওয়াল হামদু লিল্লাহি আলা দ্বীনিল ইসলাম। আল ইসলামু হাককুন ওয়াল কুফরু বাতিলুন। আল ইসলামু নূরুন ওয়াল কুফরু জুলমাতুন‘। এছাড়া অযু শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে পড়তে হবে- ‘আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়াআশ হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু‘।
এগুলো ছাড়াও ওযুর আরো অনেক দোয়া রয়েছে।
ওযু কিভাবে করতে হয়
ওযু করার নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে। ozu korar sothik niom ওযু করতে হয় পানি দিয়ে। তাই প্রথমে পবিত্র পানি সংগ্রহ করতে হবে। এরপর নিচের নিয়মে ধারাবাহিকভাবে ওযূ করতে হবে-
- দুই হাতে পানি নিয়ে কব্জি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করতে হবে। এক হাতে আঙ্গুলকে অন্য হাতের আঙ্গুলের ভিতর ঢুকিয়ে খিলাল করতে হবে।
- মুখে পানি নিয়ে ৩ বার কুলি করতে হবে। গড়গড়া করে কুলি করা উত্তম তবে রোজাদার হলে গড়গড়া করা যাবে না। সম্ভব হলে মিছওযাক করবে বা হাতের আঙ্গুল দিয়ে দাঁত ঘোঁষে নিবে।
- ডান হাতে পানি নিয়ে ৩ বার নাকে দিতে হবে। আর পানি দেওয়ার সময় বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলি দিয়ে নাকের ভিতরে পরিষ্কার করবে। রোজাদার না হলে পানি নাকে দিয়ে টানবে অথবা একটু জোরে দিবে যেন নাকের অনেক ভিতরে পর্যন্ত পানি যায়।
- সমস্ত মুখমণ্ডল ৩ বার ধৌত করা। মুখমণ্ডল বলতে উপরে কপালের চুলের গোড়া পর্যন্ত ও নিচে থুতনীর নিচ পর্যন্ত এবং দুপাশে কানের লতী পর্যন্ত। তবে ঘন দাড়ি আছে তারা দাড়িতে আঙুল দিয়ে খিলাল করবে।
- ডান হাতের হাতের কনুইসহ ৩ বার ধৌত করা এবং বাম হাত দিয়ে ভালোভাবে মর্দন করা।
- একইভাবে বাম হাতের হাতের কনুইসহ ৩ বার ধৌত করা এবং ডান হাত দিয়ে ভালোভাবে মর্দন করা।
- এরপর সমস্ত মাথা ১ বার মাছেহ করা এবং গর্দান(গাড়) মাছেহ করা।
- সর্বশেষে উভয় পায়ের টাখনুগিরাসহ ধৌত করা। পা ধোয়ার সময় হতের সাহায্যে পায়ের আঙ্গুলকে খিলাল করা এবং টাখনুগিরা পর্যন্ত মর্দন করা।
ক্ষত ও ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে ওযু করার সঠিক নিয়ম
ওযু করার স্থানে কারো যদি কাটা বা ক্ষত অথবা ব্যান্ডেজ থাকে এবং যদি এই আশংকা থাকে যে এ স্থানে পানি লাগলে সমস্যা হবে তবে ঐ স্থানের চারপাশে পানি দিয়ে ধোয়ে ব্যান্ডেজের উপরে শুধু মাসেহ করবে। তবে যদি ঘা শুকিয়ে যায় তবে অবশ্যই পানি দিয়ে ধোয়া লাগবে। kata jaigate ozu korar sothik niom
ওযু ভঙ্গের কারণ কি কি
- ০১. পায়খানা বা প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া। পায়ুপথে বায়ু, কৃমি, পাথর ইত্যাদি বের হওয়া। যৌনপথে মণী বা কামরস বা বীর্য বের হলে।
- ০২. নামাযে উচ্চস্বরে হাসিলে।
- ০৩. শরীরের কোনো জায়গায় থেকে রক্ত, পুঁজ, পানি বাহির হয়ে গড়িয়া পড়া।
- ০৪. থুথুর সাথে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া।
- ০৫. চিত বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া।
- ০৬. পাগল, মাতাল ও অচেতন হইলে।
- ০৭. মুখ ভরিয়া বমি হওয়া।
যেসব কারণে ওযু ভাঙ্গে না
- যৌনাঙ্গ স্পর্শ করলে।
- কোন কিছু পানাহার করলে।
- সর্দি হলে।
- কোন স্থানে সামান্য রক্ত বের হলো তবে গড়িয়ে না পড়লে।
যেহেতু ওযুর উপর নামাজ নির্ভরশীল। সেহেতু ওযু অবশ্যই সঠিক পদ্ধতিতে করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক নিয়মে ওযু করার তৌফিক দান করুন। আমিন।