এইডস

এইডস কি? বাঁচতে হলে জানতে হবে

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত রোগের নাম এইডস। ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম আমেরিকায় এই রোগ ধরা পড়ে। বাংলাদেশেও এই রোগের রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। যদিও আমাদের দেশে এই রোগ ব্যাপক হয়নি তবে এই রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি রয়েছে। এইডস প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। এইডস সম্পর্কে আমরা যা জানবো তাহলো-

  1. এইচআইভি / এইডস কী
  2. এইচআইভি কীভাবে ছড়ায়
  3. এইচআইভি কিভাবে ছড়ায় না
  4. কারা এইচআইভি আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছে
  5. কিভাবে এইডস প্রতিরোধ করা সম্ভব

এইচআইভি / এইডস কী

এখনও বাংলাদেশের অনেকেই জানে না এইচআইভি বা এইডস কি? hiv ki এইচআইভি হলো- “হিউম্যান ইম্যিউনো ডেফিসিয়েন্সী ভাইরাস ( HIV = Human Immunodeficiency Virus )” এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এই HIV যদি কোন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে তাহলে ধীরে ধীরে তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যদিও এইচআইভি সংক্রমণের পর থেকে কোন ব্যক্তি দীর্ঘদিন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে। কিন্তু একটি নিদির্ষ্ট সময় পর তিনি এইডস রোগে আক্রান্ত হন। aids ki এইডস হলো- “একোয়ার্ড ইম্যিউনো ডেফিসিয়েন্সী সিনড্রম ( AIDS = Acquired Immuno Deficiency Syndrome )” আর AIDS আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণ রোগে( সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, জ্বর ইত্যাদিতে) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করতে পারেন। কেননা তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

এইচআইভি কীভাবে ছড়ায়

সাধারণত তিন ধরণের তরল পদার্থের মাধ্যমে HIV ছড়িয়ে থাকে। এগুলো হলো- ১. রক্ত ২.বীর্য ৩. মাতৃদুগ্ধ

  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তদানের মাধ্যমে রক্তগ্রহীতার শরীরে এইচআইভি প্রবেশ করতে পারে।
  • এইচআইভি বহনকারী ব্যক্তির ব্যবহৃত সূঁচ ও সিরিঞ্জ অন্য ব্যক্তি ব্যবহার করলে এইচআইভি ছড়াতে পারে।
  • সেলুনে অনিরাপদ ক্ষুর, ব্লেড ইত্যাদি ব্যবহার করলে।
  • দাঁতের চিকিৎসা গ্রহণের সময় অনিরাপদ যন্ত্রপাতির মাধ্যমে
  • রক্তে মাদকদ্রব্য প্রবেশ করালে এইচআইভি সংক্রমণ হতে পারে।
  • HIV আক্রান্ত সঙ্গীর সাতে অনিরাপদ / বিকৃত যৌন আচরণের মাধ্যমে যৌন মিলন করলে এইচআইভি সংক্রমণ হতে পারে।
  • গর্ভবতী মায়ের যদি এইচআইভি থাকে তাহলে গর্ভস্থ সন্তান জন্মের সময় অথবা জন্মের পর মাতৃদুগ্ধের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমিত হতে পারে।

এইচআইভি কিভাবে ছড়ায় না

১. আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে চলাফেরা করলে।
২. এইচআইভি আক্রান্তের সাথে খাওয়া দাওয়া করলে।
৩. করমর্দন বা হ্যান্ডশেক করলে।
৪. কাপড় বা ব্যবহৃত পোশাক পরিধান করলে।
৫. AIDS আক্রান্তের শরীর স্পর্শ করলে।
৬. একই গোসলখানা বা পায়খানা ব্যবহার করলে।
৭. আক্রান্ত ব্যক্তির থালা-বাসন, বিছানা, বালিশ ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে এইডস ছড়ায় না।

কারা এইচআইভি আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছে

যেকোন ব্যক্তির উল্লেখিত কারণে এইচআইভি আক্রান্ত হতে পারে তবে নিম্নোক্তরা এই আক্রান্তের ঝুঁকিতে বেশি রয়েছে। এরা হলোঃ-
১. কিশোর – কিশোরি
২. যৌনকর্মী এবং তাদের খদ্দের
৩. ভাসমান জনগোষ্ঠী বা পথ – শিশু
৪. সমকামী
৫. নেশাগ্রহণকারী

কিভাবে এইডস প্রতিরোধ করা সম্ভব

যেহেতু এখনও HIV বা AIDS এর কোন প্রতিষেধক মূলক টিকা বা ঔষধ অথবা চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি সেহেতু এইডসকে প্রতিরোধ করতে হবে। এইজন্য করণীয় হচ্ছে-
১. রক্তে এইচআইভি আছে কি না তা পরীক্ষা করে শরীরে প্রবেশ করানো।
২. অন্যের ব্যবহৃত ক্ষুর,ব্লেড ব্যবহার না করা বা করলে জীবানুমুক্ত করে ব্যবহার করা
৩. মাদকদ্রব্য সেবন বা শরীরে প্রবেশ না করানো।
৪. অনিরাপদ বা বিকৃত যৌন আচরণ পরিহার করা।
৫. আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ বাচ্চাকে খাওয়ানো যাবে না।
৬. এইডস সংক্রান্ত সচেতনতা মিডিয়াতে প্রচার করা।
৭. পাঠ্য বইয়ে এই সম্পর্কিত শিক্ষা দেওয়া।
৮. নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা।
৯. বিদেশে গমণ বা আগমণকারীদের রক্ত পরীক্ষা করা।
১০. দীর্ঘমেয়াদে ইহা দূরকরার জন্য সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা।

এইডস মানেই নিশ্চিত মৃত্যু । ইহা শুধু ব্যক্তিকে তিলে তিলে ধ্বংস করে না বরং অর্থনৈতিক, সামাজিকভাবে দেশকেও ক্ষতিগ্রস্থ করে। তাই এইডস থেকে নিজে সচেতন থাকতে হবে এবং অন্যকে সচেতন করতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *