মুদ্রা

ইসলামে যাকাতের বিধান

সামর্থ্যবান লোকের জন্য যাকাত নামাজ বা রোজার মতই একটি ফরজ ইবাদাত। যাকাত দিলে সম্পদ পবিত্র হয় এবং বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা যাকাতের কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। যাকাত দেওয়া মানে কারো প্রতি কোন দান বা দয়া করা নয়। ইহা ধনীদের সম্পদে গরীবের হক বা অধিকার।

যাকাতের পরিচয়

যাকাত শব্দটির শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বর্ধিত হওয়া, পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করা। আর ব্যাপক অর্থে যাকাত বলতে বুঝায় শরীয়তের বিধান অনুযায়ী নেসাব পরিমাণ সম্পত্তির স্বত্বাধিকারী কুরআনে বর্ণিত খাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ প্রদান করা। zakat mane ki

নিসাব পরিমাণ সম্পদ কি

নিসাব পরিমাণ বলতে কারো কাছে যদি ১ বছর পরিবারের সমস্ত খরচ মিটাবার পর ৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ অথবা উভয়টি মিলে ৫২.৫ তোলা রূপার সমমূল্যের সম্পদ বা এর চাইতে বেশি থাকলে সে সম্পদের যাকাত দিতে হবে। এক্ষেত্র উক্ত মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ যাকাত দিতে হবে। ki poriman sompod thakle zakat dite hobe

কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে

যেহেতু এখানে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয় নাই সেহেতু আপনি কিভাবে বুঝবেন কত টাকা থাকলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে? এক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে স্বর্ণ বা রূপার বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী। ধরি, এক ভরি স্বর্ণের দাম = ৪৮০০০ টাকা। সুতরাং ৭.৫ ভরি স্বর্ণের দাম (৪৮০০০ * ৭.৫) = ৩৬০০০০ টাকা। সুতরাং এখন আপনার কাছে যদি কমপক্ষে তিন লক্ষ ষাট হাজার (৩৬০০০০) টাকা বা তার বেশি থাকে তাহলে এই টাকার উপর যাকাত দিতে হবে। এখানে ৩৬০০০০ টাকা হলো আপনার নিসাব পরিমাণ সম্পদ। koto taka thakle zakat dite hobe

মোট টাকা বা সম্পদের কতটুকু যাকাত দিতে হবে

মোট সম্পত্তির শতকরা আড়াই ভাগ ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ যাকাত দিতে হবে। ধরি, আপনার নিসাব পরিমাণ সম্পদের মূল্য ৩৬০০০০ টাকা। তাহলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে ৩৬০০০০ * ২.৫% = ৯০০০ টাকা। তবে কৃষি পন্য ও গবাদি পশুর ক্ষেত্রে যাকাত দেওয়ার পরিমাণ একটু ভিন্ন। এগুলো ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট থেকে দেখে আসুন।
sompoder koto tuku zakat dite hobe

যাকাত কারা পাবে বা যাকাতের খাতসমূহ

৮ টি খাতে যাকাত দেওয়া যাবে। এই সম্পর্কে সূরা তাওবার ৬০ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে। kake zakat dewa zabe

  • ফক্বীর (দরিদ্র সাধারণ জনগণ)
  • মিসকীন (অভাবী মানুষ)
  • যাকাত আদায়ে নিযুক্ত ব্যক্তি
  • (অমুসলিমদের)মন জয় করার জন্য
  • ক্রীতদাস বা গোলাম মুক্তি
  • ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
  • আল্লাহর পথে ও
  • মুসাফির।

যেখানে বা যাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে না

  • মসজিদ ও মাদ্রাসার নির্মাণ কাজের জন্যে
  • মসজিদ ও মাদ্রাসার ইমাম, মোয়াজ্জেম, খাদেম, শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতনের জন্যে
  • কোন ধনী ব্যক্তিকে
  • পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, ছেলে-মেয়ে, নাতী-নাতনী এদের উপরের ও নিচের আত্বীয় স্বজনকে।
  • স্বামীকে অথবা স্ত্রীকে
  • মৃত্যু ব্যক্তির দাফনের জন্য

উপরে উল্লেখিত এসব খাতে যাকাত দেওয়া যাবে না।

যাকাত উসুল করার খাত

যেসব জিনিসের উপর যাকাত দিতে হয়। এরকম ৬টি খাত হলো-

  • নগদ হাতে বা ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ।
  • সোনা-রূপা ও সোনা-রূপা দ্বারা তৈরি অলঙ্কার।
  • ব্যবসায়ের পণ্যসামগ্রী।
  • কৃষি উৎপন্ন পণ্যসামগ্রী।
  • খনিজ উৎপাদিত সম্পদ এবং
  • সব ধরনের গবাধি পশু।

যেসব সম্পদের যাকাত দিতে হবে না

এমন কিছু সম্পদ আছে যার উপর যাকাত দিতে হবে না। zesob sompoder zakat dite hobe na এরকম ১০ টি সম্পদ হলো-

  • নিসাব অপেক্ষা কম পরিমাণ অর্থ-সম্পদ।
  • নিসাব বছরের মধ্যে অর্জিত ও ব্যয়িত সম্পদ।
  • ঘর-বাড়ি, দালান কোঠা বা বসবাস, দোকান-পাট ও কলকারখানা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এমন সম্পদ।
  • পোষা পাখি হাঁস-মুরগি
  • ব্যবহার্য সামগ্রী। যেমন- কাপড়-চোপড়, আসবাবপত্র, গৃহস্থালির তৈজসপত্র ও বই-পত্র ইত্যাদি।
  • যন্ত্রপাতি ও সাজ-সরঞ্জাম।
  • শিক্ষার সমুদয় উপকরণ।
  • ব্যবহার্য যানবাহন।
  • ব্যবহারের পশু ঘোড়া, গাধা, খচ্চর, উট
  • ওয়াকফকৃত সম্পত্তি।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সম্পদের সঠিক যাকাত প্রদান করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *