ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জীবনের প্রতিটি জিনেসের ব্যাপারে এখানে বর্ণনা রয়েছে। সে হিসাবে নারীদের মাসিক বা হায়েজ ও নিফাস সম্পর্কেও ইসলামে নানা বিধি-নিষেধ রয়েছে। আজ আমরা জানবো ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড সম্পর্কে ইসলামের বিবরণ-
হায়েজ বা মাসিক বা পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব কি
প্রতিমাসের একটি নির্দিষ্ট সময় প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের যোনিপথে তরল স্রাব বা রক্তের যে ঝর্ণাধারা নির্গত হয় তাকে মাসিক/ঋতুস্রাব/হায়েজ/পিরিয়ড বলা হয়। ইহা সাধারণত তিন দিন, পাঁচ দিন, সাত দিন বা সর্বোচ্চ দশ দিন পর্যন্ত হতে পারে।
নিফাস কি
নিফাস হায়েজের মত হলেও পার্থক্য হলো নারীদের সন্তান জন্মদানের পর বা গর্ভপাতের পর যে রক্তস্রাব হয় তাকে নিফাস বলে। ইহা সর্বোচ্চ চল্লিশ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে সিজার বা অপারেশনের মাধ্যমে গর্ভপাত হলে তা নিফাস হবে না।
মাসিক ও নিফাসের সময় যেসব কাজ করা যাবে না
মাসিক ও নিফাসের সময় একজন নারীর শরীর অপবিত্র বা নাপাক থাকে। তাই এসময় মহিলারা কিছু কাজ থেকে বিরত থাকবে। এগুলো হলোঃ-
- নামাজ আদায় করা যাবে না।
- রোজা রাখা যাবে না।
- কুরআন স্পর্শ বা তেলাওয়াত করা যাবে না।
- বায়তুল্লাহ শরীফ স্পর্শ করা যাবে না।
- মসজিদে প্রবেশ করা যাবে না।
- স্বামী-স্ত্রীর সহবাস করা যাবে না।
যদিও নামাজ পড়া ও রোজা রাখা একজন নারীর উপর ফরজ তবে এই মাসিকের ও নিফাসের সময় তা শিথিল করা হয়েছে।
মাসিক ও নিফাস বন্ধ হওয়ার পর করণীয়
মেয়েদের হায়েজ ও নিফাস বন্ধ হওয়ার পর তাদের উপর নামায, রোজাসহ অন্যান্য সকল ইবাদত পুনরায় কার্যকর হবে। তবে হায়েজ ও নিফাস বন্ধ হওয়ার পর তাকে অবশ্যই গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
হায়েজ বা মাসিকের দাগ
মাসিকের রক্ত বা স্রাব যদি কাপড়ে লেগে যায় তবে তা অপবিত্র বা নাপাক কাপড় বলে গণ্য হবে। হযরত আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, এক মহিলা আল্লাহর রাসূলের নিকট এসে জিজ্ঞাস করলেন-“ওগো আল্লাহর রাসূল (সা) আমাদের মেয়েদের কাপড়ে ঋতুর(হায়েজের) রক্ত বা দাগ লেগে যায়। এমতাবস্থায় আমরা কি করবো? তিনি বললেন, প্রথমে ঘসে তুলে ফেলবে। তারপর পানি ঢেলে ধুইয়ে নিবে। তারপর তা দিয়ে নামাজ পড়বে”।(বুখারী ও মুসলিম)
অতএব বলা যায় যে, কাপড়ে যদি দাগ লেগে যায় তবে তা পানি দিয়ে একবার, দুইবার, অথবা তিনবার উত্তমরূপে ধুয়ে নিবে। প্রয়োজনে সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করবে যেন তা ভালোভাবে পরিস্কার হয়।
মাসিকের পর নামাজ বা রোজার কাযা
মাসিকের সময় যেহেতু নারীদের নামাজ ও রোজা আদায় করা নিষিদ্ধ। সেহেতু মাসিকের পর কি এগুলোর কাযা আদায় করতে হবে কিনা? এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হচ্ছে নামাজের কাযা আদায় করতে হবে না । তবে রোজার কাযা আদায় করতে হবে।
মাসিকের সময় যৌন মিলন
মাসিকের সময় স্বামী-স্ত্রীর সহবাস করা হারাম। তবে সহবাস ছাড়া মেলামেশা করতে বাঁধা নেই। অর্থাৎ স্ত্রীর নাভীর নিচ থেকে হাঁটুর উপর পর্যন্ত স্থান পরিহার করতে হবে।
মেডিকেল সাইন্স অনুযায়ী ঋতুস্রাবের সময় নারীর যৌনপথে নানা রোগ-জীবাণু থাকে। তাই এসময় সহবাস করলে সাংঘাতিক রোগ-ব্যাধির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও মাসিক বন্ধের পর গোসলের পূর্বে সহবাস করা উচিত নয়।
উপরোক্ত বিধি-নিষেধ ছাড়া মাসিকের সময় একজন নারী স্বাভাবিক ইবাদত এবং কাজ কর্ম করতে পারবে। ইসলামের অনুশাসন মেনে চলি দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করি।