গোসল মানে পবিত্র পানি দ্বারা সমস্ত শরীর ভালোভাবে ধৌত করা। ইসলামে গোসল ৩ প্রকার। যথাঃ ফরজ গোসল, সুন্নাত গোসল, মুস্তাহাব গোসল। আজ আমরা জানবো-
গোসল কখন ফরজ হয়
এমন কিছু কারণ আছে যেগুলোর জন্য অবশ্যই গোসল করতে হবে বা গোসল করা ফরজ।
foroj gosol ar niom এগুলো হলো-
- স্বপ্নদোষ, যৌন উত্তেজনা বা অন্যকোন কারণে ইচ্চাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত বীর্যপাত হলে (পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য প্রযোজ্য)।
- স্ত্রীর সাথে গুপ্তাঙ্গের মাধ্যমে যৌন মিলন করলে বীর্যপাত হোক বা না হোক (স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য)।
- মেয়েদের হায়েজ ও নিফাস বন্ধ হলে গোসল করা ফরজ।
গোসল ফরজ হলে যেসব কাজ করা যাবে না তা হলোঃ- ১. নামাজ পড়া যাবে না। ২. হজ্জ্বের সময় তাওয়াফ করা যাবে না। ৩. মসজিদে অবস্থান করা যাবে না। তবে বিশেষ প্রয়োজনে যাওয়া যাবে। ৪. কুরআন স্পর্শ করা যাবে না। ৫. কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না। তবে কোনো কোনো মতে কুরআনের দোয়া সমূহ পড়া যাবে।
গোসল ফরজ অবস্থায় খাওয়া, ঘুমানো, ঘরে বাহিরে অন্য যেকোনো কাজ করা যাবে। গোসল ফরজ হলে বিনা কারণে বিলম্ব করা উচিত নয়। দ্রুত গোসল করে নেওয়া ভালো। শরীরের কোনো নাপাকি লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করে নিতে হবে। দ্রুত গোসল করা সম্ভব না হলে অজু করে রাখা উচিত।
কখন গোসল করা সুন্নাত
সাধারণত ৪ টি উদ্দেশ্যে গোসল করা সুন্নাত। যথা-
- শুক্রবার জুমার নামাজের উদ্দেশ্যে গোসল করা সুন্নাত।
- ঈদুর আযহা ও ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য। অর্থাৎ দুই ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে।
- হজ্জ করার পূর্বে ইহরাম বাঁধার উদ্দেশ্য গোসল করা।
- হজ্জ শেষে আরাফার দিনে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পরে গোসল করা সুন্নাত।
কখন গোসল করা মুস্তাহাব
বিভিন্ন কারণে গোসল করা মুস্তাহাব। যেসব কারণে গোসল করা মুস্তাহাব তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলোঃ-
- কোন অমুসলিম মুসলমান হওয়ার পর গোসল করা মুস্তাহাব। তবে যদি সে অপবিত্র থাকে তাহলে গোসল করা ফরজ।
- নাবালক বা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর।
- মানসিক রোগী সুস্থ হওয়ার পর।
- অজ্ঞান ব্যক্তির জ্ঞান ফেরে আসার পর।
- নেশাকারী ব্যক্তির নেশা দূর হলে।
- বগল ও গুপ্তাঙ্গের লোম কাটার পর।
- শবে কদর বা শবে বরাতে ইবাদাতের পূর্বে।
- মক্কা বা মদিনা শরীফে প্রবেশের জন্য।
- গুনাহ হতে তওবা করার জন্য
- বিপদ – আপদ ও মুসিবতের সময় নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে গোসল করা মুস্তাহাব।
ইসলামে গোসলের নিয়ম – কানুন
ইসলাম একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। সেই হিসাবে ইসলামে গোসলের নিয়ম – কানুন রয়েছে। এই বিধি-বিধানগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ গোসলের ফরজ, গোসলের সুন্নাত, গোসলের মুস্তাহাব। নিচে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ-
গোসলের ফরজগুলো কি কি
গোসলের ফরজ ৩ টি। gosoler foroj যথাঃ-
- কুলি করা। উত্তমরূপে কুলি করার জন্য গড় গড়াসহ কুলি করতে হবে। তবে রোজা থাকা অবস্থায় গড় গড়া করার প্রয়োজন নেই।
- নাকে পানি দেওয়া। নাকে এমনভাবে পানি দিতে হবে যেন নাকের নরম হাড় পর্যন্ত পানি যায়।
- সমস্ত শরীর ভালোভাবে ধৌত করা। শরীর এমনভাবে ধৌত করতে হবে যেন সুঁচ পরিমাণ জায়গা শুকনা না থাকে।
যে ব্যক্তির উপর গোসল ফরজ হয়েছে তাকে অবশ্যই এই তিনটি শর্ত যথাযথভাবে পালন করতে হবে। অন্যথায় তার গোসল আদায় হবে না। islamic bath or shower
গোসলের সুন্নাতগুলো কি কি
গোসলের উল্লেখ্যযোগ্য সুন্নাতগুলো হলো-
- দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
- লজ্জাস্থান পরিষ্কার করা।
- গোসলের পূর্বে অজু করা।
- কাপড় বা শরীরের কোন স্থানে নাপাক কিছু লেগে থাকলে গোসলের আগে তা পরিষ্কার করা।
- গোসলখানায় পানি বা কাদা বা ময়লা জমে থাকলে এক পাশে বা দূরে গিয়ে পা ধৌত করা।
- সমস্ত শরীর ৩ বার ধৌত করা।
গোসলের মুস্তাহাবগুলো কি কি
- গোসল করার জন্য নিয়ত করা।
- গোসল করার জন্য ঠিক যতটুকু পানি প্রয়োজন ততটুকু ব্যবহার করা।
- শরীরকে ভালোভাবে ঘোঁষে গোসল করা।
- পর্দার আড়ালে বা কেউ যেন না দেখে এমনভাবে গোসল করা।
- গোসলের সময় অযথা কারো সাথে কথা না বলা।
- বিনা প্রয়োজনে গোসলে কারো সাহায্য না নেওয়া।
- গোসল শেষে সমস্ত শরীরের পানি মুছে ফেলা।
গোসলের মাধ্যমে শরীর অপবিত্র থেকে পবিত্র হয়। এছাড়া এর মাধ্যমে শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। শরীর পরিষ্কারের জন্যে সাবান, শ্যাম্পু বা অন্য যেকোন পরিষ্কারক দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক নিয়মে গোসল করার তৌফিক দান করুন। আমিন