ইসলামী শরীয়তের হুকুমের প্রধান উৎস দুটি। একটি হলো কুরআন আর অন্যটি হাদিস। এই কুরআন ও হাদীসে যে সকল কাজ করার আদেশ দিয়েছেন এবং যে সকল কাজ করতে নিষেধ করেছেন তাকে শরীয়তের হুকুম বলে। শরীয়তের হুকুমগুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- ১. ফরজ ২. ওয়াজিব ৩. সুন্নত ৪. নফল ৫. মুস্তাহাব ৬. হারাম ৭. মাকরুহ ৮. জায়েজ বা মুবাহ
ফরজ কি
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যে সকল কাজ করতে আদেশ দিয়েছেন তাকে ফরজ বলা হয়। কেউ যদি ফরজ আদায় না করে তাহলে সে ফাসিক হয়ে যাবে। আর যদি ফরজ অস্বীকার করে তাহলে কাফের হয়ে যাবে। তবে ফরজ আবার দুই প্রকার। যথা- ১. ফরজে আইন ২. ফরজে কেফায়াহ foroz ki
ফরজে আইন কি
আল্লাহ তায়ালার যে সকল হুকুম সাবালক নারী-পুরুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য এবং সবাইকে পৃথকভাবে এই হুকুম পালন করতে হবে তাকে ফরজে আইন বলে। যথা- নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি। forze ain ki
ফরজে কেফায়াহ কি
আল্লাহ তায়ালার যে সকল হুকুম সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হলেও তাদের মধ্যে থেকে কিছু লোক এই হুকুম পালন করলে অন্যরা গোনাহগার হবে না তবে কেউ আদায় না করলে সকলে গোনাহগার হবে তাকে ফরজে কেফায়াহ বলে। যথা- জানাজার নামাজ, জেহাদ ইত্যাদি। forze kefayah ki
ওয়াজিব কি
কেউ যদি ওয়াজিব অস্বীকার করে তবে সে ফাসেক হয়ে যাবে। ওয়াজিব হলো ইসলামের এমন বিধান যা ফরজ এর মত অবশ্যই পালন করতে হবে। যথা- বিতরের নামাজ, উভয় ঈদের নামাজ, কুরবানী করা ইত্যাদি। owajib ki
সুন্নত কি / কাকে বলে
আমাদের নবী হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) যেসব কথা বলেছেন, যে কাজ করেছেন বা সম্মতি প্রকাশ করেছেন সেসব কথা,কাজ ও সম্মতিকে সুন্নাত বলে। সুন্নাত দুই প্রকার। যথা- সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ বা যায়েদাহ। sunnat ki
সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কি
যে কাজ আমাদের নবী হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) নিয়মিতভাবে করেছেন ও কোন কারণ ছাড়া এই কাজ তরক করেননি এবং সাহাবাদেরকেও করতে আদেশ দিয়েছেন তাকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বলে। এসব কাজ আমাদেরকে অবশ্যই করতে হবে তা না হলে আমরা গুনাহগার হবো। যথা- আযান, ইকামত, ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ ইত্যাদি। sunnate muakkadah ki
সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ কি
যে কাজ আমাদের নবী হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) অনিয়মিতভাবে করেছেন তাকে
সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ বলে। এসব কাজ তিনি কখনও করেছেন আবার কখনও করেননি। এটা করলে সাওয়াব হবে তবে না করলে গুনাহ হবে না। যথা- আছরের চার রাকাত সুন্নাত নামাজ। sunnate gaire muakkadah ki
মুস্তাহাব, নফল, হালাল, হারাম, মাকরূহ, মুবাহ
মুস্তাহাব কি
যে সব কাজ আমাদের নবী হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) করেছেন তবে অধিকাংশ সময়ই তা করেননি তাকে মুস্তাহাব বলে। ইহা করলে সাওয়াব আছে তবে না করলে গুনাহ নেই। মুস্তাহাব বলতে উত্তম কাজকে বুঝায়। যথা- ঘুমানোর পূর্বে ওযূ করা। mustahab ki
নফল কি
নফল মুস্তাহবের মতই ভাল কাজ। ইহা করলে সাওয়াব হবে তবে না করলে সমস্যা নেই। যেমন- আমি দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করলাম। nofol ki
হালাল কি
যেসব কিছু ইসলামি শরীয়তে জায়েজ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে তাকে হালাল বলা যায়। একজন প্রকৃত মুসলমান সবসময় হালাল কাজ করার চেষ্টা করে, হালাল পথে চলার চেষ্টা করে। এগুলো আমাদের জীবন চলার রূপরেখা নির্দেশ করে। যেমন- সৎ পথে আয় করা, সত্য কথা বলা, কারো আমানত রক্ষা করা, মাছ খাওয়া, আল্লাহর নামে যবাইকৃত পশুর মাংস খাওয়া ইত্যাদি। islame halal ki
হারাম কি
যেসব কিছু ইসলামি শরীয়তে নাজায়েজ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে তাকে হারাম বলে। এসব কাজ না করতে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কেউ যদি হারামকে অস্বীকার করে অথবা হারামকে হালাল মনে করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। একজন প্রকৃত মুসলমান সবসময় হারাম কাজ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। যেমন- শুকরের মাংস খাওয়া, অন্যের হক নষ্ট করা, চুরি করা, ডাকাতি করা, আমানতের খেয়ানত করা ইত্যাদি। islame haram ki
মাকরুহ কি
যেসব কাজ সরাসরি হারাম নয় তবে হারামের মত এড়িয়ে চলা উচিত সেসব কাজকে মাকরুহ বলে। মাকরুহ বলতে অপছন্দনীয় কাজকে বুঝায়। মাকরুহ দুই প্রকার। যথা- মাকরুহে তাহরীমী, মাকরুহে তানযিহী। makruh ki
মাকরুহে তাহরীমী কি
মাকরুহে তাহরীমী বলতে সেসব অপছন্দনীয় কাজকে বুঝায় যেগুলো করলে গোনাহ হবে। কেননা ইহা অনেকটা হারামের সমপর্যায়। তাই ইহা অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। যেমন- ধূমপান করা।
মাকরুহে তানযিহী কি
মাকরুহে তাহরীমী বলতে সেসব অপছন্দনীয় কাজকে বুঝায় যেগুলো হঠাৎ করে করলে গুনাহ হবে না তবে না করা উত্তম। ইহা থেকে বেঁচে থাকাই ভাল। যেমন- ওযু করার সময় কথা বলা।
মুবাহ কি
মুবাহ হলো এমন সব কাজ যেগুলোর ব্যাপারে ইসলামী শরীয়তে কোন বিধি-নিষেধ আরোপ করেনি। এগুলো করলে সাওয়াবও হবে না আবার না করলে গুনাহও হবে না। যেমন- পানাহার করা, ব্যবসা-বাণিজ্য করা ইত্যাদি। তবে এসব কাজ সাওয়াবের নিয়তে করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে। তবে খারাপ উদ্দেশ্যে করলে গুনাহ হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইসলামি শরীয়তের হুকুমসমূহ মেনে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
আমার জানামতে কিয়াসের মাধ্যমে ধূমপানকে হারাম করা হয়েছে। আর ধূমপানও নেশাকারী দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত। মানুষ ছাড়তে পারে না সহজে।