land documents

সম্পত্তির দলিল কত প্রকার হতে পারে

দলিল কত প্রকার তা জানা আবশ্যক। কেউ যদি আপনার সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে আপনি কী করবেন? নিশ্চয় দলিল দেখতে চাইবেন। ঠিক তাই কোন সম্পত্তির মালিক হতে হলে ঐ সম্পত্তির দলিল থাকতে হবে। আর এই দলিল বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। আজ আমরা জানবো জমির দলিল কত প্রকার হতে পারে এবং সাফ কবলা দলিল কি, দান-পত্র দলিল কি, হেবা দলিল কি, হেবা বিল এওয়াজ দলিল কি, এওয়াজ দলিল কি, বন্টননামা দলিল কি, অসিয়তনামা দলিল কি, উইল দলিল কি, না-দাবি দলিল কি, বায়নাপত্র দলিল কি, আদালতযোগে সাফ কবলা দলিল কি ইত্যাদি।

আরো পড়ুন:

১. সাফ কবলা কাকে বলে

কেউ যদি তার সম্পত্তি অন্যের কাছে অর্থের বিনিময় বিক্রয় করে এবং ক্রেতাকে সম্পত্তির দলিল ও রেজিস্ট্রি করে দেন, তাকে সাফ কবলা বা বিক্রয় কবলা অথবা খরিদা কবলা বলা হয়। এক্ষেত্রে নির্ধারিত দলিল স্ট্যাম্পে লেখার পর বিক্রেতা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে হাজির হয়ে দলিলে স্বাক্ষর করে ক্রেতাকে রেজিস্ট্রি করে দেন। আর এই রেজিস্ট্রি সম্পূর্ণ হওয়ার পর বিক্রেতা এবং তার ওয়ারিশগনের মালিকানা স্বত্ব বিলুপ্ত হয়ে তা ক্রেতা এবং তার ওয়ারিশগনের নিকট হস্তান্তর হয়। যেমন- রহিম সাহেব ৫ শতাংশ জমির প্রতি শতাংশ পাঁচ লক্ষ টাকা দরে করিমের নিকট বিক্রয় করলেন।

২. দান-পত্র দলিল

সম্পত্তির মালিক যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তার সম্পত্তি দান করতে পারেন। তবে এই দানে কোন প্রকার শর্ত এবং বিনিময় থাকতে পারবে না। যেমন- খান সাহেব তার সম্পত্তির ১০ শতাংশ মসজিদের জন্য দান করলেন।

৩. হেবা দলিল

মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই হেবা অর্থাৎ দানপত্র দলিল। সাধারণত রক্তের সম্পর্কের ব্যক্তিকে এই দলিল করে দেওয়া হয়। এই দলিল কোনো কিছুর বিনিময়ে নয়, কেবল সন্তুষ্ট হয়ে এ দান করা হয়। কিন্তু এই হেবা শর্তবিহীন অবস্থায় দান বিক্রি, কট, রেহান, রূপান্তর ইত্যাদি সব ক্ষমতা প্রদানে দান বা হেবা করতে হবে। এই দানপত্রে দাতার কোন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে না। যেমন- মতিন সাহেব তার ছোট মেয়ের উপর সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ২০ শতাংশ জমি লিখে দিলেন।

৪. হেবা বিল এওয়াজ দলিল

হেবা বিল এওয়াজ মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আরেকটি দানপত্র দলিল। যদিও এই দানও সন্তুষ্ট হয়ে করা হয় তবে এতে কোনো কিছুর বিনিময় থাকে। যেমন- পবিত্র কোরআন, জায়নামাজ, তসবিহ, মোহরানার টাকা বা যেকোন জিনিসের বিনিময়েও হতে পারে। যেমন- গলার হার ইত্যাদি। এই দলিলের গ্রহীতা সম্পূর্ণ শর্তবিহীন অবস্থায় জমি হস্তান্তর ও রূপান্তর করতে পারবেন এবং দাতার যাবতীয় স্বত্ব গ্রহীতার উপর অর্পিত হবে। এই দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি হতে হবে। যেমন- কামাল সাহেব তার নিজ স্ত্রীকে মোহরানার টাকার বিনিময় ৫ শতাংশ জমি দিলেন।

৫. এওয়াজ দলিল

যেকোনো ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সাথে তাদের উভয়ের স্থাবর সম্পত্তি বদলি করতে পারবেন। একেই এওয়াজ বা বদল অথবা পরিবর্তন বলে। এক্ষেত্রে উভয়ের সম্মতি থাকতে হবে এবং দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। যেমন- রুবেলের বাড়ির পাশে সুবেলের জমি আবার সুবেলের বাড়ির পাশে রুবেলের জমি। এক্ষেত্রে তারা নিজের সুবিধার জন্য একজনের জমি অন্য জন্যের সাথে বদল করার দলিল সম্পাদন করে রেজিস্ট্রি করল। একেই এওয়াজ পরিবর্তন বা বদল দলিল বলে।

৬. বন্টননামা দলিল

শরিক বা হকদারদের মধ্যে সম্পত্তি ক্রমে নিজ নিজ বংশধররা প্রাপ্ত হয়। ঐ অংশের জন্য যে দলিল করতে হয়, তাকে বন্টননামা দলিল বলে। একই সম্পত্তির মালিক একই বংশের লোককে সাধারণত শরিক বা হকদার বলা হয়। শরিক দুই ধরনের। যথাঃ
১. উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক(Co-sharer by inheritance)
২. কোন শরিক থেকে খরিদ সূত্রে শরিক(Co-sharer by Purchase)
বন্টননামা দলিল করার সময় সব অংশীদার দলিলে স্বাক্ষর করে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে। রেজিস্ট্রি ছাড়া নিজেরা দলিলে স্বাক্ষর করলে তা কার্যকর হতে পারে। এতে কোন অংশীদার অনুপস্থিত থাকলে বন্টননামা শুদ্ধ হবে না। যেমন- সালাম মারা যাওয়ার পর তার পাঁচ সন্তান বাবার সম্পত্তিকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে বন্টননামা দলিল করে নিল।

৭. অসিয়তনামা দলিল

মুসলিম ধর্মের কোনো ব্যক্তি তার সম্পত্তি যে কোনো ব্যক্তিকে বা তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তিকে প্রদান করে থাকেন তাকে অসিয়তনামা বলে। এটি মৌখিক বা লিখিত হতে পারে। তবে মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়ংশ পর্যন্ত অসিয়ত করা যায়। এর বেশী করতে হলে ওয়ারিশগণের সম্মতির প্রয়োজন হবে। যেমন- মোঃ আবদুল মালেক মৃত্যুর পূর্বে  তার চাচাত ভাইকে মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়ংশ অসিয়তনামা করে যান।

৮. উইল দলিল

হিন্দু ধর্মের লোক তাদের নিজস্ব সম্পত্তি যাকে ইচ্ছা উইল করে দিতে পারেন। তবে যিনি উইল করলেন তিনি যদি একের অধিক উইল করেন তবে সর্বশেষ উইল কার্যকর হবে। যেমন- অঞ্জন দও তার মাসিকে মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়ংশ অসিয়তনামা করে যান।

৯. না-দাবি দলিল

কেউ যদি তার প্রাপ্ত সম্পত্তিতে স্বত্বাধিকার নেই বা স্বত্বাধিকার স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেছেন এ মর্মে দলিল সম্পাদন করে ও রেজিস্ট্রি করে দেন তাহলে তাকে না-দাবি দলিল বলা হয়। যেমন- আবুল তার বাবার সম্পত্তির আধিকার ত্যাগ করেছেন।

১০. বায়নাপত্র দলিল

কোনো সম্পত্তি বিক্রির জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যে চুক্তিপত্র করা হয়, তাকে বায়নাপত্র বলে। এটি রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। কেননা এর মাধ্যমেও মালিকানা স্বত্ব হস্তান্তর হতে পারে। যদি বিক্রেতা বায়নাপত্রে জমির দখল বুঝিয়ে দেন এবং মূল্যের টাকা গ্রহণ করেন এবং বিশেষ কারণে দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দেননি বা দিতে পারেননি; তাই সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৩ ধারা মতে আংশিক বিক্রয় কার্যকর হয়েছে। সুতারাং জমিতে খরিদ্দারের স্বত্ব হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। যেমন- নুরু মিয়া তার ২ শতাংশ জমি বিক্রির জন্য মাসুদ মিয়া থেকে বায়না বাবদ ২০০০০০ টাকা নিয়ে জমি দখল বুঝিয়ে দিলেন।

১১. আদালতযোগে সাফ কবলা দলিল

১০ নং এ উল্লেখিত গ্রহণযোগ্য বায়নাপত্র নিয়ে কেউ আদালতে নালিশ করে আদালত কর্তৃক দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সব ঠিক থাকলে আদালত দাতার পক্ষে স্বাক্ষর করে ক্রেতাকে দলিল রেজিস্ট্রি করে দেবেন। যেমন- নুরু মিয়া দলিল করার আগেই মারা যান। তাই মাসুদ মিয়া আদালতে নালিশ করে দলিল রেজিস্ট্রি করেন।

উল্লেখিত দলিল ছাড়াও আরোও বিভিন্ন প্রকার দলিল রয়েছে। যেগুলো সাধারণ বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ধন্যবাদ Bd Tweet এর সাথে থাকার জন্য।

10 thoughts on “সম্পত্তির দলিল কত প্রকার হতে পারে”

  1. Bahar Hossain santo

    পিতার সম্পত্তি পুত্রকে হেভা করলে বোনেরা কি সেই সম্পতির মালিকানা দাবী করতে পারবে?

    1. উত্তরঃ লিখিত দলিলের মাধ্যমে রেজিস্টি করা হেভা করা সম্পত্তি বোনেরা এবং ভাইয়েরাও মালিকানা দাবি করতে পারবে না। যেমনঃ করিম সাহেবের ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। তিনি তার ছোট ছেলেকে হেভা দলিলের মাধ্যমে রেজিস্টি করে ৫ ডিসিমেল জমি দান করলেন। এক্ষেত্রে তার বড় ছেলে এবং ২ মেয়ে উক্ত হেভা করা ৫ ডিসিমেল জমির অংশ পাবে না। ধন্যবাদ

      1. Assalamulaikum,
        ১৯৮২ সালে আমার দাদার নিজ সম্পত্তি,তার নিজের ভাইয়ের ছেলেরা,ভুয়া দলিল করে,আমার দাদার সাহ্মর নকল করে,তাদের নামে করে নেই।তারা জমি বিক্রি হিসাব দেখিয়েছে,৯ গণ্ডা ১০ হাজার,৫ গণ্ডা ও ১০ হাজার টাকা।আর দলিলের ষ্টাম্প ছিল ১৫০ টাকার।আমার প্রশ্ন দলিল টি ১৯৮২ সালে করা হয়ছে কিনা তা কিভাবে বুঝবো।আর যদি হয়ে ও থাকে তবে ১৯৮২ সালের,হিসাব মতে কত টাকার জন্য কত টাকা ষ্টাম্প লাগতো? proper Answer টা পেলে উপকৃত হব।

        1. ওয়ালাইকুমস সালাম।
          আপনি যদি সনাক্ত করতে পারেন এটি জাল দলিল তা হলে আপনি একজন অভিজ্ঞ উকিলের পরামর্শ গ্রহণ করেন।
          এছাড়াও আপনি সংশ্লিষ্ট ভূমি রেজিস্টারের কার্যালয় থেকে দলিলের নকল সংগ্রহ করে, ভূমি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
          দলিল কোন সালে করা হয়েছে তা নকল দলিল তুললে সেখানে দেখতে পাবেন। ১৫০ টাকার স্ট্যাম্প কোনো সমস্যা না।
          আপনার কাছে যদি ঔ জমির কোনো খতিয়ান বা দাগ নাম্বার থাকে তাহলে নিকটস্থ ভূমি অফিস থেকে তথ্য নিতে পারবেন। ধন্যবাদ।

  2. মোঃ আব্দুল রাজ্জাক

    আমার দাদার মা, আমার দাদাকে হেবা করে ৫.৯ একর জমি দেন। আমার দাদার মা মারা যাওয়ার পর দাদা ৫.৯ একর জমি তার ভাতিজাদের না দাবী দলিল করে দেয়। সিএস রের্কড দাদার মায়ের নামে এসএ রের্কডও দাদার মায়ের নামে এখন সেই জমি কি আমার বাবা পেতে পারে ?

    1. যেহেতু আপনার দাদা জমিটুকু না দাবি দলিল করে দিয়েছেন এবং যদি সেই দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে তাহলে আপনার বাবা তার মালিক হতে পারবে না। ধন্যবাদ। তবে একজন বিজ্ঞ উকিলের পরামর্শ নিন।

  3. দিলরুবা নাজনীন

    আমার বাবার মৃত্যুর পর, সে সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত অর্থে আমার ভাই একটি বাড়ি তৈরি করেন। উক্ত বাড়িতে আমার কোনো অধিকার আছে কি না? থাকলে কতখানি অংশ অধিকার আছে?

    1. এখানে বিষয়টি ক্লিয়ার না। যদি সম্পত্তি ভাগ হয়ে থাকে এবং আপনার ভাই তার নিজের অংশ বিক্রি করে নিজের অংশেই ঘর তৈরি করে তাহলে তাতে আপনার কোন অংশ নেই।
      যদি সম্পত্তি ভাগ না হয়ে থাকে এবং প্রাপ্ত অর্থ আপনার বাবার জমি বিক্রির মাধ্যমে পেয়ে থাকে এবং আপনার বাবার সম্পত্তিতে ঘর তৈরি করে থাকে তাহলে তাতে অবশ্যই আপনার অংশে থাকবে। তবে আপনার বাবার ওয়ারিশ কতজন তার উপর নির্ভর করে কতটুকু অংশ থাকবে।
      একজন বিজ্ঞ এডভোকেট এর পরামর্শ নিন। ধন্যবাদ

Leave a Reply to Didar Cancel Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *