খতিয়ান ফরম

জমির খতিয়ান কি কত প্রকার ও কি কি

খতিয়ান কি

ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে খতিয়ান মানে জাবেদা থেকে হিসাব সমূহকে শ্রেণী বিন্যাস করণ। তবে জায়গা জমির ক্ষেত্রে খতিয়ান অর্থ হইল ‘হিসাব’। মূলত জমির মালিকানা স্বত্ব রক্ষা ও রাজস্ব আদায়ের জন্য জরিপ বিভাগ কর্তৃক প্রতিটি মৌজার জমির এক বা একাধিক মালিকের নাম, পিতা বা স্বামীর নাম, ঠিকানা, দাগ নম্বর, ভূমির পরিমাণ, হিস্যা(অংশ), খাজনা ইত্যাদি বিবরণসহ যে ভূমি স্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।

খতিয়ান কত প্রকার ও কি কি

বাংলাদেশে সাধারণত ৪ ধরণের খতিয়ান রয়েছে। যথা-

১. সি. এস খতিয়ান
২. এস. এ খতিয়ান
৩. আর. এস খতিয়ান
৪. বি. এস খতিয়ান / সিটি জরিপ

১. সি. এস খতিয়ানঃ ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ সরকার জরিপ করে যে খতিয়ান তৈরি করে তাকে সি. এস খতিয়ান বলা হয়। আমাদের দেশে এটিই প্রাথমিক খতিয়ান হিসাবে বিবেচিত।

২. এস. এ খতিয়ানঃ পাকিস্তান আমলে ১৯৫০ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের চতুর্থ অধ্যায় এর ১৭ হতে ৩১ দ্বারা মতে ১৯৫৬-৬০ সালের দিকে যে খতিয়ান তৈরি করা হয় তাকে এস. এ (State Acquision) খতিয়ান বলে।

৩. আর. এস খতিয়ানঃ বাংলাদেশ সরকার পূর্বের তৈরিকৃত খতিয়ানের ভুল ত্রুটি সংশোধন করার জন্য নতুনভাবে উদ্যোগ নিয়ে যে খতিয়ান প্রস্তুত করেন তা আর. এস(Renisional Survey)খতিয়ান নামে পরিচিত।

৪. বি. এস খতিয়ান / সিটি জরিপঃ ১৯৯৮-৯৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলমান জরিপকে বি. এস খতিয়ান বা সিটি জরিপ বলে। এই খতিয়ান প্রস্তুতের কার্যক্রম এখনো চলছে।

খতিয়ানে কি কি বিষয় থাকে

খতিয়ানে কি কি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সে সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় অর্জন বিধিমালা ১৮ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে। এগুলো হলো-

১. প্রজা বা দখলদারের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা, তারা কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত, তাদের অধিকৃত জমির অবস্থান শ্রেণী পরিমাণ ও সীমানা।

২. প্রজার জমির মালিকের এবং এস্টেটের মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।

৩. খতিয়ান প্রস্তুতের সময় খাজনা এবং ২৮, ২৯, ৩০ বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত খাজনা। যদি খাজনা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে যে সময় ও যে যে পদ্ধক্ষেপে বৃদ্ধি পায় তার বিবরণ। যে পদ্ধতিতে খাজনা ধার্য হয়েছে তার বিবরণ।

৪. গোচরণ ভূমি, বনভূমি ও মৎস্য খামারের জন্য ধারণকৃত অর্থ। কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে প্রজা কর্তৃক পানির ব্যবহার এবং পানি সরবরাহের জন্য যন্ত্রপাতি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত প্রজা ও জমির মালিকের মধ্যে অধিকার ও কর্তব্যের বিবরণ। প্রজাস্বত্ব সম্পর্কিত শর্ত ও তার পরিণতি।

৫. নিজস্ব জমি হলে তার বিবরণ। পথ চলার অধিকার ও জমির সংলগ্ন অন্যান্য ইজমেন্টের অধিকার।

৭. খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, বাট্টা নম্বর, এরিয়া নম্বর, মৌজা নম্বর ও জে. এল নম্বর, জেলার নাম, উপজেলা/থানা/ইউনিয়ন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে।

খতিয়ান তৈরির ইতিহাস সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। এরপর পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশ  স্বাধীন হওয়ার পরেও সংশোধনের মাধ্যমে অনেক ধাপে খতিয়ান তৈরির কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়।  

18 thoughts on “জমির খতিয়ান কি কত প্রকার ও কি কি”

  1. বি এস খতিয়ান আমার নামে যদি থাকে তাহলে সেই ভুমি মালিক সরকার হতে পারবে কি

    1. আসলে, সকল জমির মালিক সরকার। যদি আপনি ভূমির প্রকৃত মালিক হয়ে থাকেন তাহলে সরকার ভূমি অধিগ্রহণ করতে চাইলে আপনে তা দিতে বাধ্য এবং বিনিময়ে গভমেন্ট আপনাকে মৌজা রেটের তিন গুণ বেশি মূল্য দিবে।
      আর যদি, সরকারি জমি ভুলক্রমে আপনার নামে বি.এস খতিয়ানে অন্তর্ভূক্ত হয়ে থাকে এবং ঔ দাগের জমি মূলত সরকারি জমি ছিল। তাহলে আইন অনুযায়ী তার মালিকানা সরকারের।
      এছাড়াও দীর্ঘদিন ভূমির কর পরিশোধ না করলে তা সরকারের খাস জমি হয়ে যেতে পারে।
      আপনার উচিত একজন অভিজ্ঞ উকিলের পরামর্শ গ্রহণ করা। ধন্যবাদ।

      1. জাকারিয়া

        আমি আর এস খতিয়ান দেখে জমি কিনেছি কিন্তু দেখলাম আমার মালিক এস এ খতিয়ান দ্বারা অন্য জনের কাছে বিক্রি করেছে কিন্তু সে খারিজ করে নাই এবং আর এস খতিয়ানে নাম আসে নাই তাহলে আমার কি করনিও

        1. এক্ষেত্রে আপনি জমির পূর্বের মালিকের নামে মামলা করতে পারবেন। আর অভিজ্ঞ উকিলের পরামর্শ নিন।

  2. আর.এস খতিয়ান আমার নামে যদি থাকে তাহলে সেই ভুমি মালিক সরকার হতে পারবে কি?

    1. আসলে, সকল জমির মালিক সরকার। যদি আপনি ভূমির প্রকৃত মালিক হয়ে থাকেন তাহলে সরকার ভূমি অধিগ্রহণ করতে চাইলে আপনে তা দিতে বাধ্য এবং বিনিময়ে গভমেন্ট আপনাকে মৌজা রেটের তিন গুণ বেশি মূল্য দিবে।
      আর যদি, সরকারি জমি ভুলক্রমে আপনার নামে আর.এস খতিয়ানে অন্তর্ভূক্ত হয়ে থাকে এবং ঔ দাগের জমি মূলত সরকারি জমি ছিল। তাহলে আইন অনুযায়ী তার মালিকানা সরকারের।
      এছাড়াও দীর্ঘদিন ভূমির কর পরিশোধ না করলে তা সরকারের খাস জমি হয়ে যেতে পারে।
      আপনার উচিত একজন অভিজ্ঞ উকিলের পরামর্শ গ্রহণ করা। ধন্যবাদ।

    1. R O R মানে Record of Right. এর অন্য নাম পর্চা। মূলত ভারতীয় আইনে পর্চাকে আর ও আর(ROR) বলে। ভূমি জরিপের রের্কড(খতিয়ান) তৈরির পর তার যে অনুলিপি জমির মালিককে দেওয়া হয় তাকে আর ও আর(ROR) বা পর্চা বলে। এটি সাধারণত তিন প্রকার। যথাঃ সি.এস(C.S), আর.এস(R.S), এল.আর(L.R) ।

  3. কামরুল হাসান

    ১. সি. এস খতিয়ান
    ২. এস. এ খতিয়ান
    ৩. আর. এস খতিয়ান
    আমার একটা পৈতৃক জমি এই তিনটায় আছে এবং গত ৮০ বছর দরে আমাদের দখলে. এবং পরবর্তীতে এটি বি এস এ অন্য কারো নামে আছে. এখন তারা বলতেছে জমি তাদের। এখন আমাদের করণীয় কি ??
    এখন জমির মালিক কে হবে ??

    1. i. যদি আপনার অভিভাবক (জমির মালিক) জমি তাদের নিকট জমি বিক্রয় করে থাকে এবং তারা জমা খারিজ করার কারণে নতুন জরিপে তাদের নাম এসে থাকে তাহলে জমির মালিক তারাই হবে।
      ii. আর যদি ভুলক্রমে নতুন জরিপে(বি এস খতিয়ানে) তাদের নাম এসে থাকে তাহলে নিকটস্থ ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে দেখেন। কেন নতুন খতিয়ানে নামের পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়াও অভিজ্ঞ উকিলের পরামর্শে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেন। ধন্যবাদ।

  4. বিএস বাবার নামে।জমি ৪০ শতাংশ ।ছেলেরা তিন ভাই ।এক ছেলে তার স্ত্রীর নামে অছিয়ত দলিল করে।এখন এই জমি কেনা যাবে কিভাবে?

    1. অছিয়ত দলিল যদি রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে তাহলে সম্পত্তি কেনা যাবে। তবে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ উকিলের পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে হবে।

  5. আমার দাদার নামে রেজিস্ট্রেশন করা জমির দলিল হারিয়ে গেছে, এস এ রেকর্ড, আর এস (1962সালের ) দাদার নামে, প্রায় 80–90 বছর আমরা ভোগ দখল করছি, কেউ পূর্বের রেকর্ড ধরে ঐ জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করেছে, এক্ষেত্রে করণীয় কি? পাকিস্তান সময়কার দলিল কি পাওয়া সম্ভব? দলিল ছাড়া কি কি পদক্ষেপ নিয়ে যেতে পারে? দয়া করে জানাবেন????

    1. ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস থেকে অবশ্যই আপনি দলিলের নকল তুলতে পারবেন। যারা মামলা করেছে তারা কিসের ভিত্তিতে মালিকানা দাবি করছে তা বুঝতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ উকিলের পরামর্শ নিয়ে কাজ করবেন।

  6. আমার দাদার নামে আর এস এবং এস এ খতিয়ান জমি আছে সেগুলো অনলাইনে আবেদন করছি আজ তিন মাস হয়ে গেছে এখনো কপি পাইনি কি করনিয়? পোস্ট অফিসে যোগাযোগ করলে পাইনি আজ পর্যন্ত

    1. খতিয়ানের জন্য নিকটস্থ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে অথবা সেটেলমেন্ট অফিসে যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ

  7. আর এস দাগের একটা জমির মালিক চার ভাই। চার ভাই মৌখিকভাবে ভাই বাটোয়ারা মূলে সমান অংশে বাড়িঘর করে বসবাস করে আসছে তিনচার পুরুষ ধরে। এক ভাই তার নিজ ভাগের অংশ তার একমাত্র মেয়ের নামে দান করলেও তা আবার মেয়ে তার বাবার সম্পত্তি বাবাকেই দান করেন। যারা বর্তমানে সকলেই মৃত। এখন সেই মেয়ের রেখে যাওয়া সন্তানরা মায়ের সম্পত্তি নিজ নিজ নামে খারিজ করতে চাইলে কি মায়ের বাপ চাচাদের ভোগ দখলীয় সম্পত্তি সহকারে পুরো জোতের খাজনা পরিশোধ করে মেয়ের দান কৃত নানার সম্পত্তি নিজ নিজ নামে খারিজ করতে হবে। নাকি তারা যেটুকু ভোগ দখলে আছে শুধু সেটুকুর খাজনা পরিশোধ করে নাম খারিজের জন্য আবেদন করতে পারবে। দয়া করে জানাবেন।

    1. যদি নানার সম্পত্তি তা নিজ নামে আলাদা নামজারি না করে থাকে তাহলে নানার ভাইদের সম্পত্তিসহ মোট সম্পত্তির উপর খাজনা পরিশোধ করা লাগতে পারে। তবে নিকটস্থ ইউনিয়ন ভূমি অফিস/উপজেলা ভূমি অফিস থেকে তথ্য নিলে উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *