জৈনধর্ম(Jainism) বৈদিক সভ্যতা উন্মেষের সমসাময়িককালে উদ্ভূত হয়েছে। এই ধর্মের লোকেরা দুটি শাখায় বিভক্ত। একটি হলো শ্বেতাম্বর আর অন্যটি হলো দিগম্বর। জৈন ধর্মের প্রধানত দুটি দিক রয়েছে। একটি জৈন অধিবিদ্যা অপরটি জৈন নীতি।
জৈন অধিবিদ্যাতে দুরকম দ্রব্যের স্বকৃিতি রয়েছে। একটি জীব আর অন্যটি অজীব। জীব বলতে প্রাণ আছে এমন কিছুকে বুঝায়। এই জীব আবার দুধরনের একটি হলো সংসারী জীব আরেকটি হলো মুক্ত জীব। অজীব বলতে জড় দ্রব্যকে বুঝায়। এগুলোকে পাঁচভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন- আকাশ, ধর্ম, অধর্ম, কাল, পুদগল।
জৈনধর্মমতে মানুষের কর্মসমূহের প্রধানত দুই রূপ প্রত্যক্ষ করা যায়। এর একটি দ্রব্যকর্ম অপরটি ভাবকর্ম। এছাড়াও জৈনধর্মে কর্মের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে।
অনেকান্তবাদ বা স্যাদবাদ
জৈন দর্শনের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অনেকান্তবাদ বা স্যাদবাদ। জৈনরা বিশ্বাস করেন, দ্রব্যের স্বরূপ অনির্দিষ্ট, অনির্ধারিত। দ্রব্যকে তাই কোনো একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পুরোপুরি বর্ণনা করা, পরিপূর্ণভাবে বিশ্লেষণ করা যায় না। কোনো একটি বিশেষ বর্ণনা বা অভিমতকে একমাত্র সত্য বর্ণনা হিসাবে গ্রহণ করা হলে দ্রব্যটির বর্ণনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এ কারণেই জৈনরা অনেকান্তবাদী।
মোক্ষমার্গ
জৈনরা কোনো সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না। তাদের মতে, মানুষ তার নিজের সাধনা ও তপস্যার দ্বারা সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান হয়ে দেবত্ব লাভ করতে পারে। সাধারণ মানুষ প্রকৃতির নিয়মে কর্ম-বন্ধনে আবদ্ধ থাকেন। এই কর্মবন্ধন থেকে মুক্তি লাভের জন্য ৩টি জিনিস প্রয়োজন সম্যগ জ্ঞান( জ্ঞান ), সম্যগ দর্শন( বিশ্বাস ), সম্যগ চরিত্র( অভ্যাস )। এই তিনটিকে একত্রে রত্নত্রয় বলা হয়।
পঞ্চব্রত
মোক্ষমার্গ অর্জনের জন্য জৈনধর্মে পাঁচটি বিশেষ নীতি অনুশীলন ও অভ্যাসের কথা বলা হয়। এই পাঁচটি নীতি জৈনধর্মে পঞ্চব্রত নামে পরিচিত। এগুলো হলোঃ-
১. অহিংসা (ছোট বা বড় যেকোন জীবের প্রতি হিংসা প্রদর্শন করা যাবে না)।
২. সত্য (সঠিক কথা বলার সাথে সাথে সুখকর ও মঙ্গলময় কথা বলতে হবে)।
৩. অস্তেয় (বিনা অনুমোতিতে অন্যের অর্থ সম্পত্তি গ্রহণ বা ভোগ করা যাবে না)।
৪. ব্রহ্মচর্য (পুরোপুরি যৌনাচার থেকে বিরত থাকতে হবে)।
৫. অপরিগ্রহ (বিলাসিতা ত্যাগ করতে হবে)।
পঞ্চব্রত পালনের পদ্ধতি
জৈনধর্মে পঞ্চব্রত পালনের সাধারণত দুটি রীতি লক্ষ্য করা যায়। যথা-
১. অনুব্রতঃ সাধারণত গৃহী বা শ্রাবকের জন্য পালনীয় ব্রত হলো অনুব্রত। এটি পালনে কঠোরতার পরিমাণ কম।
২. মহাব্রতঃ মহাব্রতী বা শ্রমণদের জন্য পঞ্চব্রত নীতি অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করা আবশ্যক। এখানে পঞ্চব্রতের সবকিছু পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হবে। মোক্ষলাভের জন্য মহাব্রতই আবশ্যক
ভারতের রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট অঞ্চলে প্রধানত জৈন ধর্মের প্রসার দেখা যায়। জৈনদের মন্দির গুলোতে মহাবীর ও পার্শ্ব নাথের পূজা ও প্রার্থনা করা হয়। জৈনধর্মে সনাতন ধর্মের প্রভাব থাকলেও এটি একটি স্বতন্ত্র ধর্ম ও জীবন দর্শন হিসাবে পরিচিত।
তথ্যসূত্রঃ
বই- বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্ম
লেখক- ড. মোঃ ইব্রাহীম খলিল